প্রত্যেক স্বৈরাচারের চরিত্র একই। জনগণের দাবি ও অধিকারের কণ্ঠ স্তব্ধ করে দেয়ার জন্য তারা সবসময় দলীয় লাঠিয়াল, অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী ও পুলিশ দিয়ে নিষ্ঠুর নৃশংসতা চালায়। একইভাবে ফ্যাসিবাদী ডামি সরকার গতকাল রাত থেকে ছাত্রলীগকে লেলিয়ে দিয়ে সারাদেশে ছাত্র-ছাত্রীদের উপর পাশবিক নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ড চালাচ্ছে। আজ আমার বাংলাদেশ পার্টি-এবি পার্টি আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ থেকে এ অভিযোগ করেন দলের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বৈষম্যমূলক কোটা বিরোধী শিক্ষার্থীদের উপর সরকার দলীয় সন্ত্রাসীদের নারকীয় হামলার প্রতিবাদে আজ ১৬ জুলাই মঙ্গলবার বিকাল ৪টায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের ডাক দেয় আমার বাংলাদেশ পার্টি-এবি পার্টি। বিক্ষোভ মিছিল পূর্ব সমাবেশে বক্তব্য রাখেন এবি পার্টির যুগ্ম আহবায়ক, সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম ও বিএম নাজমুল হক, সদস্যসচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু ও যুগ্ম সদস্যসচিব ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ।
অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম বলেন, সারাদেশে শিক্ষার্থীরা যখন কোটা সংস্কারের একটি যৌক্তিক দাবিতে আন্দোলন করছে ঠিক সেই সময়ে ডামি সরকারের প্রধানমন্ত্রী ছাত্রদেরকে রাজাকারের বাচ্চা বলে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করেছেন। সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের উপর পুলিশ ও ছাত্রলীগকে লেলিয়ে দিয়েছেন। ছাত্রলীগের গুন্ডারা শুধু বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের উপর হামলা করেই থেমে থাকেনি তারা হাসপাতালে পর্যন্ত হামলা করেছে। তিনি বলেন, এই হামলার সাথে যারা জড়িত তাদের মানবতাবিরোধী ট্রাইবুনালে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। তিনি হাসপাতালে সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর হামলাকে গাজায় ইসরাইলী হানাদর বাহিনীর আল শিফা হাসপাতালে হামলার সাথে তুলনা করে বলেন, আওয়ামীলীগের নেতাদের হুকুমে যারাই এই হামলার সাথে জড়িত তাদের সবাইকে বিচারের আওতায় নিয়ে আসা হবে।
মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, আওয়ামীলীগ মুক্তিযোদ্ধাদের নামে চাঁদাবাজি, ঘুষ নিয়ে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার তালিকা বানিয়ে চাকরি দেয়া সহ নানা অপকর্মের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান ভুলুন্ঠিত করেছে। তারা যেভাবে নিরীহ ছাত্রছাত্রীদের উপর ছাত্রলীগকে লেলিয়ে দিয়েছে তাতে রাজাকারের চরিত্রই ফুটে উঠেছে। প্রধানমন্ত্রী সাধারণ শিক্ষার্থীদের রাজাকারের বাচ্চা বলেছেন অথচ তিনি নিজেই রাজাকারের আশ্রয় প্রশ্রয়দাতা। তিনি নিজে মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন রাজাকারের বাচ্চার সাথে, তার বর্তমান প্রেস সেক্রেটারি নিজে বলেছেন তার পিতা শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান ছিলো। এই সরকার রাজাকারদের একটি তালিকা তৈরি করা শুরু করেছিলো, ১১ হাজার লোকের তালিকা তৈরি করার পর দেখা গেলো ৬ হাজারই হলো আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মী, এরপরই তারা তালিকা বাতিল করে দেয়। তিনি ছাত্রদের উপর নির্বিচার গুলী করে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রংপুরসহ বিভিন্ন স্থানে ৬ ছাত্রকে হত্যা ও অসংখ্য ছাত্র-ছাত্রীকে আহত করার তীব্র নিন্দা জানান। তিনি প্রতি ফোটা রক্ত ও প্রতিটি শহীদের জীবনের বিনিময়ে ফ্যাসিবাদের পতনের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
ব্যারিস্টার ফুয়াদ বলেন, সাধারণ শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশে একটি নতুন মুক্তিযুদ্ধ শুরু করেছে। যে যুদ্ধ আওয়ামী ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মুক্তিযুদ্ধ ব্যবসাকে চাপেটাঘাত করেছে। শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কারের এই আন্দোলন সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের সন্তানদের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন। যখনই সাধারণ মানুষ তাদের যৌক্তিক কোন দাবি নিয়ে মাঠে এসেছে তখনই এই ফ্যাসিস্ট দখলদার সরকার তাদেরকে রাজাকার, স্বাধীনতা বিরোধী ট্যাগ লাগিয়ে আন্দোলনকে নস্যাৎ করার ষড়যন্ত্র করেছে। কোটা বহালও আওয়ামী ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একটা চেতনার ব্যবসা। তিনি গোটা দেশের মানুষকে আন্দোলনে শরিক হওয়ার আহবান জানিয়ে বলেন, নিজেদের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষা, অধিকার রক্ষার জন্যই আপনাদের মাঠে নামতে হবে।
সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল বিজয়নগর, কাকরাইল, পল্টন, প্রেসক্লাব সহ রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে। মিছিলটি বিজয়নগর পৌছালে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন -এনডিএমের সভাপতি ববি হাজ্জাজ ও গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর সহ তাদের নেতাকর্মীরা অংশ নেন।
বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন এবি পার্টির যুগ্ম সদস্যসচিব ব্যারিস্টার যোবায়ের আহমেদ ভুইয়া, দফতর সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ আল মামুন রানা, প্রচার সম্পাদক আনোয়ার সাদাত টুটুল, সিনিয়র সহকারী সদস্যসচিব এবিএম খালিদ হাসান, মহানগর উত্তরের আহবায়ক আলতাফ হোসাইন, যুবপার্টির আহবায়ক শাহাদাতুল্লাহ টুটুল, কেন্দ্রীয় সহকারী সদস্যসচিব শাহ আব্দুর রহমান ঢাকা মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম আহবায়ক আনোয়ার ফারুক, গাজী নাসির, মহানগর উত্তরের যুগ্ম আহবায়ক ফিরোজ কবির, যুবপার্টির সদস্যসচিব হাদিউজ্জামান খোকন, এবি পার্টি লইয়ার্সের দফতর সম্পাদক অ্যাডভোকে আলী নাসের খান, ছাত্রপক্ষের আহবায়ক মোহাম্মদ প্রিন্স, মহানগর উত্তরের সদস্যসচিব সেলিম খান, নারী নেত্রী আমেনা বেগম, রুনা হোসাইন, দক্ষিণের যুগ্ম সদস্যসচিব সফিউল বাসার, আহমেদ বারকাজ নাসির, কেফায়েত হোসেন তানভীর, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল হালিম নান্নু সহ কেন্দ্রীয় ও মহানগরীর বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।