• শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:২৭ অপরাহ্ন
  • ইপেপার
শিরোনাম:
প্রশাসন বিএনপির পক্ষে, তাদের অধীনে নির্বাচন সম্ভব নয়: নাহিদ ন্যাশনাল কমেডি পার্টি হয়ে যাচ্ছে এনসিপি: তাসনিম খলিল রাজনীতিতে আসা ভুল ছিল না, নির্বাচন করলে আবার জিতব: সাকিব এবারও নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ দেননি প্রধান উপদেষ্টা: মির্জা ফখরুল আমতলীতে এক বিএনপি কর্মীর বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার থানায় অভিযোগ। আমতলীতে চাদা না দেয়ায় ৬ জনকে কুপিয়ে আহত। অপারেশন ডেভিল হান্ট, আমতলীতে আ লীগ নেতা গ্রেফতার। রায়পুরায় ভোটার নিবন্ধন কার্যক্রম পরিদর্শন করেন নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম আমতলী চাওড়ায় মেহেদী জামান রাকিব এর ঈদ পরবর্তী শুভেচ্ছা বিনিময় ও মটর সাইকেল শোভাযাত্রা। মাদারীপুরে বৃদ্ধ ভ্যানচালককে কুপিয়ে হত্যা করে ভ্যান ছিনতাই

ব্যয়বহুল ড্রেজিংয়ের ফাঁদে দেশের সমুদ্রবন্দর

মুহাম্মাদ শিমুল হুসাইন / ৯১
মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর, ২০২৪

দেশের দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক সমুদ্রবন্দর মোংলা। ২০২৩-২৪ অর্থবছর এ বন্দরে জাহাজ হ্যান্ডলিং হয়েছে ৮৪৬টি। এখান থেকে সব মিলিয়ে রাজস্ব আয় হয়েছে ৩১৯ কোটি টাকা।

 

দেশের দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক সমুদ্রবন্দর মোংলা। ২০২৩-২৪ অর্থবছর এ বন্দরে জাহাজ হ্যান্ডলিং হয়েছে ৮৪৬টি। এখান থেকে সব মিলিয়ে রাজস্ব আয় হয়েছে ৩১৯ কোটি টাকা। বিপরীতে মোংলা বন্দরের পশুর চ্যানেল খননকাজে চলমান রয়েছে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প। পানিসম্পদ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পলি জমে দু-এক বছরের মধ্যে আবারো কমতে পারে মোংলা বন্দর চ্যানেলের গভীরতা। গভীরতা ধরে রাখতে প্রতি তিন থেকে পাঁচ বছর পর পর দরকার হবে ব্যয়বহুল ড্রেজিং প্রকল্পের।

দেশের আরেক সমুদ্রবন্দর পায়রা। মোংলার মতোই পায়রায় বার্ষিক রাজস্ব আয় হয় কমবেশি ৩০০ কোটি টাকা। এক বছর আগে পায়রা বন্দরের রাবনাবাদ চ্যানেল ড্রেজিং করা হয়েছে। খরচ হয়েছে সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকার বেশি। ড্রেজিং স্কিম শেষ হওয়ার এক বছরের মধ্যে চ্যানেলটির নাব্য আবার কমে গিয়ে বড় জাহাজ চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বন্দরসংশ্লিষ্টরা এখন পুনরায় ড্রেজিং প্রকল্প কিংবা স্কিম গ্রহণের প্রয়োজনীয়তার কথা বলছেন। আর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ চ্যানেলে দিয়ে প্রতিনিয়ত বিপুল পরিমাণ পলি এসে জমছে। নাব্য ধরে রাখতে হলে রাবনাবাদে নিয়মিত ড্রেজিং চালিয়ে যেতে হবে।

মোংলা ও পায়রার ব্যয়বহুল ড্রেজিংয়ের চাপের মধ্যেই দেশে আরো দুটি সমুদ্রবন্দর গড়ে তোলা হচ্ছে। এর একটি চট্টগ্রামের বে-টার্মিনাল। সম্প্রতি এই প্রকল্পের জন্য ৬৫ কোটি ডলার ঋণ অনুমোদন দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। অন্যদিকে গত সপ্তাহে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরের নির্মাণকাজ জাপানকে দিয়ে করানোর নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরের জন্য এরই মধ্যে ১৪ দশমিক ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ নৌ-চ্যানেল গড়ে তোলা হয়েছে। চ্যানেলটি তৈরি করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিপিজিসিবিএল)। বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য কয়লাবাহী জাহাজ এই চ্যানেল ব্যবহার করবে। একই চ্যানেল ব্যবহার করবে মাতারবাড়ী বন্দর ব্যবহারকারী জাহাজও।

সাড়ে ১৮ মিটার গভীর ও ৩৫০ মিটার প্রশস্ত চ্যানেলটি নির্মাণ করতে ব্যয় হয়েছে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা। চ্যানেলটির গভীরতা ধরে রাখতে নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ ড্রেজিংয়ের প্রয়োজন হবে। জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) করা এক জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মাতারবাড়ী বন্দর চ্যানেলে প্রতি বছর ৫০ লাখ ঘনমিটার ড্রেজিংয়ের প্রয়োজন হবে। প্রতি ঘনমিটার ড্রেজিংয়ের সর্বনিম্ন ব্যয় ৫ ডলার। এ হিসাবে প্রতি বছর চ্যানেলটি ড্রেজিং করতে খরচ হবে আড়াই কোটি ডলার (বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী প্রায় ৩০০ কোটি টাকা)। জাইকার প্রতিবেদনে এ ড্রেজিং ব্যয় মাতারবাড়ী বন্দর ও কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র যৌথভাবে নির্বাহ করবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

বাংলাদেশের আমদানি-রফতানি কার্যক্রমের সিংহভাগ চট্টগ্রাম বন্দরকেন্দ্রিক। সমুদ্রপথে বাণিজ্যের ৯২ শতাংশই হয় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। সর্বশেষ ২০২৩-২৪ অর্থবছর এ বন্দর থেকে রাজস্ব আয় হয়েছে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা। চট্টগ্রাম বন্দরের ওপর চাপ কমাতে নির্মাণ করা হয়েছে বে-টার্মিনাল ও মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর। তবে চালুর পর নিজস্ব আয় দিয়ে পরিচালন ব্যয় মিটিয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষ ব্যয়বহুল ড্রেজিংয়ের কাজ কতটা সামলাতে পারবে, তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর চ্যানেল ব্যয়বহুল ড্রেজিংয়ের ঝুঁকিতে রয়েছে কিনা এমন প্রশ্নে পানিসম্পদ বিশেষজ্ঞ ড. আইনুন নিশাত বণিক বার্তাকে বলেন, ‘‌বন্দর চ্যানেলে যদি নদী থাকে এবং ওই নদী দিয়ে যদি প্রচুর পরিমাণ সেডিমেন্ট (পলি) প্রবাহিত হয়, তাহলে সে চ্যানেলে নিয়মিত ড্রেজিংয়ের দরকার হবে। আমরা বিদেশের বন্দরগুলোয় দেখি স্বচ্ছ নীল পানি। এর মানে সেগুলোয় কোনো সেডিমেন্ট জমা হয় না। আমাদের এখানে মোংলা, পায়রা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার—সব জায়গায়ই প্রচুর পরিমাণ সেডিমেন্ট জমে। তবে মাতারবাড়ী বন্দর চ্যানেলে খুব বেশি ড্রেজিং প্রয়োজন হবে না। ‌মাতারবাড়ীতে গভীরতা বেশি। ৪০-৫০ ফুটের মতো গভীরতা আছে। সেখানে সেডিমেন্টের অত প্রভাব নেই।’

নদী ও পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ ম. ইনামুল হক। তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, ‘‌মাতারবাড়ী বন্দরটি গভীর সমুদ্রের কাছে। আমি মনে করি, এটা ভালোভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা যাবে। তবে মাতারবাড়ী ছাড়া অন্য সমুদ্রবন্দরগুলো দেশের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়াতে পারে।’

চট্টগ্রাম বন্দরে ‘‌বে-টার্মিনাল মেরিন ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট’ প্রকল্পে গত জুনে ৬৫ কোটি ডলার ঋণ অনুমোদন করেছে বিশ্বব্যাংক। এ ঋণের সিংহভাগই ব্যয় হবে নির্মাণাধীন টার্মিনালের ‌ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের কাজে।

প্রকল্পটি নিয়ে বিশ্বব্যাংকের এক মূল্যায়ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বে-টার্মিনালের মূল বেসিনের জন্য সাড়ে ১৫ মিটার গভীরতায় ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ৬০০ মিটার প্রশস্ত ড্রেজিং প্রয়োজন হবে। এর বাইরে চ্যানেলে প্রবেশের জন্য ১ দশমিক ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ৫০০ মিটার প্রশস্ত ড্রেজিং করতে হবে।

বে-টার্মিনাল প্রকল্পে এখন পর্যন্ত কেবল ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের বিষয়টিই আলোচনায় এসেছে। রক্ষণাবেক্ষণ ড্রেজিং নিয়ে এখনো পর্যন্ত কোনো জরিপ হয়নি। তাই এ বন্দর চ্যানেল রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বছরে কী পরিমাণ ড্রেজিং করতে হবে, সে সম্পর্কে কোনো তথ্য নেই চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বন্দর সচিব মো. ওমর ফারুক বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বে-টার্মিনালে বিশ্বব্যাংক যে লোনটা দেবে সেটা মূলত ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের জন্য। ‌তবে আমাদের কথা থাকবে যাতে এখানে মেইনটেন্যান্স ড্রেজিং অন্তর্ভুক্ত হয়। এতে খরচ কেমন হবে এখনই বলা মুশকিল। কারণ তা নির্ভর করবে রেইট অব সিলটেশন বা পলি জমার মাত্রার ওপর। পলি বেশি হলে এক রকম আর কম হলে আরেক রকম। অন্যদিকে মাতারবাড়ীতে ১৬ মিটার চ্যানেল আছে। যদিও এখন পর্যন্ত সেখানে ১৬ মিটারের জাহাজ যায়নি। জাহাজ আসছে ১২ মিটার পর্যন্ত।’

মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরের ক্ষেত্রেও মেইনটেন্যান্স ড্রেজিংয়ের বিষয়টি নিয়ে পলি জমার মাত্রা দেখে ও সমীক্ষা চালিয়ে পরিকল্পনা করা হবে বলে এ সময় জানান তিনি।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও সংবাদ

TikTok

জরুরি হটলাইন